একজন মানুষের চিন্তা শক্তি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রশ্ন আসে তখনি যখন কেউ কোন বিষয়ে অত্যাধিক পরিমানে চিন্তায় আসক্ত হয়ে পরে। কোনভাবেই রেহাই পায় না ঠিক তখনি সেটা হয়ে যায় দুশ্চিন্তা। দুশ্চিন্তার সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বিশ্ব কবি রবীন্দ্র নাথ ঠাকুর বলেছেন- “দুশ্চিন্তা হল এমন এক চিন্তা যা থেকে মানুষ কিছুতেই রেহাই পায় না, দুশ্চিন্তা কঠিন ধাতব মানুষকেও অসুস্থ করতে পারে”
দুশ্চিন্তা যেমন করে স্বাস্থ্যহানি ঘটায় তেমনি করেই এটি মনের ভিতর বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। দুশ্চিন্তার কারনে প্রধান যে সমস্যার সৃষ্টি হয় তা হল অনিদ্রা বা নিদ্রাহীনতা। এছাড়াও একজন মানুষের ভয়, হতাশা, উদ্যেগ, ঘৃণা, তিক্ততার প্রধান হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে এই দুশ্চিন্তা।
মেয়েদের চেহারা সবচেয়ে বেশি খারাপ হয়ে যায় এই দুশ্চিন্তার কারণে। দুশ্চিন্তা নিজেকে প্রকাশে বাধা দেয়। অল্প বয়সে চুল পেকে যেতে পারে, চুল উঠতে পারে, স্কিনের অনেক সমস্যা হতে পারে। দুশ্চিন্তায় মাথা ঘুরতে পারে, এমনকি দাঁতের ক্ষয়ও হতে পারে।
অনেকেই মনে করে থাকেন যে, ভয় থেকেই দুশ্চিন্তা আসে। দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগ স্নায়ুর বিকৃতি ঘটায় এবং পাকস্থলীর স্নায়ুর অনেক ক্ষতি করে থাকে এর ফলে পাচক রসে বিকৃতি ঘটে শেষ পর্যন্ত তা আলসারে রূপান্তরিত হয়।
দুশ্চিন্তার শারীরিক ও মানসিক ক্ষতির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডাঃ আলেক্সিস ক্যারেল বলেছেন “যে মানুষ দুশ্চিন্তা কিভাবে দূর করতে হায় তা জানে না, তাদের অল্প বয়সেই মৃত্যু হয়”।
আসুন জেনে নেই, কিভাবে দুশ্চিন্তা মুক্ত থাকা যায়?
প্রধানত ৩ টি ধাপ অনুসরণ করে আমরা আমাদের দুশ্চিন্তা সহজেই দূর করতে পারি।
১ম ধাপঃ সমস্ত ব্যপারটা বুঝে নেয়া-
দুশিন্তার প্রধান কারন হল এলোমেলো ভাবনা। পৃথিবীতে অর্ধেক দুশ্চিন্তা তাদেরই হয় যারা জানেনা যে আসল ব্যপারটা কিভাবে সামাধান করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল আসল ব্যপারটা বুঝে নেয়া জরুরী কেন? কারন সেটা না জানলে আমরা হয়তো বুদ্ধিমানের মত সামাধান করতে পারব না। ব্যপারটা ভালভাবে না জানলে অথবা না বুঝলে আমাদের মাথায় সেটা ঘুরপাক খেতে থাকবে। তাই এলোমেলো ভাবনা মন থেকে দূর করে দিতে হবে।
২য় ধাপঃ ঘটনার বিশ্লেষণ-
দ্বিতীয় ধাপে আমাদের ঘটনাটির বিশ্লেষণ করতে হবে যে ঘটনা নিয়ে আমরা দুশ্চিন্তা করছি। আর এই বিশ্লেষণ করার জন্য আমরা নিজেকে নিচের প্রশ্ন দুটি করতে পারি-
১। কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করছি?
২। এটা নিয়ে চিন্তা করে আমি কি করতে পারি?
পারলে আপনারা এই প্রশ্ন দুটির উত্তর লিখে রাখুন।
৩য় ধাপঃ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো এবং সে অনুযায়ী কাজ করা-
আপনি যদি দুশ্চিন্তার বিষয়টা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে আসতে পারেন তাহলেই আপনার শতকরা ৫০ ভাগ দুশ্চিন্তা কেটে যাবে। আর বাকি ৫০ ভাগ দুশ্চিন্তা দূর হবে যদি আপনি আপনার সিদ্ধান্তকে কাজে লাগাতে পারেন।
সঠিক তথ্যের উপর নির্ভর করে সিদ্ধান্ত নিন এবং সে অনুযায়ী কাজ করুন। পুনর্বিবেচনার কোন প্রয়োজন নেই। নিজেকে সন্দেহ করবেন না তাতে অন্য সন্দেহ জাগতে পারে। পিছনে তাকাবেন না বরং দুশ্চিন্তা বিশ্লেষণ করে সোজাসুজি তার মুখোমুখি হন। এছাড়া আপনার মুক্তির কোন পথ নেই।