আমরা আমাদের মা,বাবা,ভাই,বোন,আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে আরো অনেকের কাছ থেকে বরাবরই এই কথাটা শুনে এসেছি যে-কিভাবে স্বামীর মন জয় করবেন, কিভাবে শাশুড়ির মন জয় করবেন, কিভাবে শশুরবাড়ীর মন জয় করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
কিন্তু জয় পরাজয় তো পরে হবে, তার আগে আপনার ছেলের বউকে আপন তো করে নিন?
একটি মেয়ে যখন কারো ঘরের বউ হয়ে আসে তখন সে তার মা, বাবা, ভাইবোন, বন্ধুবান্ধব সবাইকে ছেড়ে চলে আসে। তাই তার মনের মধ্যে বিশাল বড় একটা গেপ তৈরি হয়। আর শ্বশুরবাড়ির লোকদের উচিত সেই গেপ টা পুরন করা।
আসুন জেনে নেই, ছেলের বউকে আপন করার বিশেষ কিছু উপায়-
- ভালবাসাঃ কারো মন জয় করার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে ভালবাসা। পৃথিবীতে যেটা টাকা-পয়সা, ধনদৌলত, ঐশ্বর্য বা শক্তির মাধ্যমে পাওয়া যায় না সেটা ভালবাসার মাধ্যমে পাওয়া সম্ভব। মেয়েরা একটু বেশিই ভালবাসাকাতর হয়। তাই বেশি কিছু নয় আপনার ছেলের বউকে একটু ভালবেসে দেখুন, কিভাবে আপনার ছেলের বউ আপনার কাছে আসে আর আপন হয়ে যায়।
- শাশুড়ি নয় মাঃ আপনি যদি আপনার ছেলের বউ এর সামনে শাশুড়ি শাশুড়ি ভাব নিয়ে থাকেন তাহলে সে কখনো আপনার আপন হবে না। হ্যাঁ, হয়তো সে বউ হিসাবে সব ধরনের ফর্মালিটিই পালন করবে। তাই আপনার ছেলের বউ কে পরের মেয়ে না ভেবে আপনার নিজের মেয়ে ভাবুন, দেখবেন আপনার ছেলের বউ আপনাকে শাশুড়ি নয় নিজের মা ই মনে করবে।
- উপহারঃ কাউকে খুশি করার একটি বড় উপায় হচ্ছে একটি ছোট্ট উপহার। একজন গৃহবধূ সবার কথাই চিন্তা করে এবং সবাইকে খুশি রাখার চেস্টা করে। কিন্তূ তার কথা কজনে ভাবে? কোনো বিশেষ দিন যেমন ঈদ, পুঁজা বা কোনো বড় দিনে আপনি আপনার ছেলে, মেয়ে, মেয়ের জামাই, নাতি-নাতনি কে কি উপহার দিবেন সেটা নিয়ে বেস্ত হয়ে পরেন। কিন্তূ একবারও কি চিন্তা করেন আপনার ছেলের বউকে কি উপহার দিবেন ? অথচ, যে মেয়েটা দিনের পর দিন শ্রম, ভালবাসা দিয়ে আপনার সংসারটাকে আগলে রাখে, প্রথম এবং প্রধান উপহারটা তো তারই প্রাপ্য। তাই সবার পাশাপাশি আপনার ছেলের বউ এর জন্যও একটা বাজেট করুন। এতে আপনার ছেলের বউ কতটা খুশি হবে সেটা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না।
- ছেলেকে শাসনঃ এমন কোন স্বামী-স্ত্রী নেই যাদের মধ্যে কোন ঝগড়াঝাঁটি হয় না। তবে যখন আপনার ছেলে কোন ছোটখাটো বিষয় নিয়ে আপনার ঘরের বউএর সাথে খারাপ ব্যবহার করে বা বউএর গায়ে হাত দেয় তখন আপনি সেখানে দাড়িয়ে চুপচাপ মজা না দেখে আপনার ছেলেকে ধমক দিতে পারেন (এত বড় সাহস তোমার? তুমি আমার সামনে ঘরের লক্ষির সাথে এমন ব্যবহার করছ?) প্রয়োজন হলে মারতেও পারেন। কারন সেই অধিকার আপনার আছে। আর যখন আপনি এই কাজটি করবেন তখন আপনার ছেলের বউ এর সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে এবং আপনার ছেলের দেওয়া সব আঘাতও ভুলে যাবে।
- সহযোগিতাঃ বিয়ের পর সংসারের সব দায়িত্ব-কর্তব্য এসে পড়ে বউএর কাধে। রান্নাবান্না, ঘর গোছানো থেকে শুরু করে শশুর-শাশুরির সেবাযত্ন, স্বামীর সেবা, সন্তান লালনপালন করা এমনকি সবাইকে সন্তুষ্ট রাখাও বউএর কাজ। তাই ঘরের বউকে রাত দিন পরিশ্রম করতে হয়। তবে আপনি যদি সুস্থ থাকেন তাহলে আপনার ছেলের বউএর একটু সহযোগিতা করতেই পারেন। যেমন আপনার নাতিনাত্নিকে দেখাশুনা করা, রান্নার সময় একটু সবজি কেটে দিলেন এইতো। তাতে করে আপনার ছেলের বউএর একটু হলেও কাজ কমবে আর আপনি পাশে থাকলে তারও কাজ করতে ভাল লাগবে।
- প্রসংশাঃ নিন্দা তো সবাই করতে জানে কিন্তু প্রসংশা করতে পারে কজনে? আপনি আপনার প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন এবং আপনার ছেলের সামনে কেবল আপনার ছেলের বউএর দোষগুলো তুলে না ধরে তার ভাল কাজেরও বর্ণনা দিন। কোন মানুষই ভুলের বাহিরে নয়। আর যে মানুষটিকে সংসারের সবদিকে খেয়াল রাখতে হয়, তার কিছু ভুল হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই ছেলের বউএর ছোটখাটো ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দিন। আর তার ভালো কাজের জন্য তাকে নিয়ে আলচনা করুন। কেননা সবাই নিজের ভাল কাজের প্রসংশা পেতে চায়। যেমন একজন পরীক্ষার্থী ভালো পরীক্ষা দিলে ভালো রেজাল্ট আশা করে ঠিক তেমনি ঘরের বউও সব কাজের শেষে প্রসংশা প্রত্যাশা করে। তাই আপনার ছেলের বউএর কেবল নিন্দা না করে প্রসংশাটাও করুন। তাহলে তার উৎসাহ আরও বেড়ে যাবে এবং আপনার প্রতি সন্তুষ্ট হবে।
- বৈষম্যমূলক আচরণ না করাঃ আপনার নিজের ছেলে মেয়ে আপনার কাছে যতটা আপন, আপনার ছেলের বউকেও ততোটাই আপন ভাবুন, পারলে তার চেয়ে বেশি আপন ভাবুন। এতে করে আপনার ছেলে বা মেয়ে কোন কষ্ট পাবে না বরং আপনার ছেলের বউ অনেক খুশি হবে আর এটা ভাববে যে, মা আমাকে অনেক ভালবাসে। আর যদি আপনি বউএর সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করেন তাহলে সে অনেক কষ্ট পাবে এবং আপনাকে কখনই তার নিজের মায়ের জায়গায় বসাতে পারবে না। এতে করে আপনি এবং আপনার ছেলের বউএর মধ্যে অনেক দূরত্ব সৃষ্টি হবে। আর এটা আপনার জন্য কখনই ভাল হবে না। কেননা একটু ভেবে দেখুন- আজ আপনি হয়তো ভাল আছেন, সুস্থ আছেন কিন্তু কাল যখন আপনি অসুস্থ হবেন, যখন আপনার বয়স হবে তখন আপনার পাশে কে থাকবে? কে আপনার সেবাযত্ন করবে? কে আপনার দেখাশুনা করবে? আপনার ছেলে? আপনার মেয়ে?? আপনার মেয়ের জামাই??? কেও না, সবাই অনেক ব্যস্ত থাকবে তখন। হয়তো আপনার ছেলে অফিস শেষে রাতে এসে বলবে, “মা, কেমন আছেন? এখন কেমন লাগছে? আপনার কিছু লাগবে? ইত্যাদি ইত্যাদি।’’ হয়তো আপনার মেয়ে, মেয়ের জামাই মাঝেমধ্যে সময় পেলে আপনাকে দেখতে আসবে। কিন্তু আপনার ঘরের বউটিকে আপনি সব সময়ই আপনার কাছে পাবেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও এই মেয়েটিই আপনার যত্ন নিবে—।
অতএব ছেলের বউএর প্রতি এই বৈষম্যমূলক আচরণ আর নয়, এবার ঘরের বউকে ভালবেসে আপন করে নিন এবং আপনারাও সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, সুখে থাকুন—–এই কামনায়…।।
লেখাটি ভাল লাগলে আপনার পরিচিত বা আপন মানুষদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনার শেয়ারে কোন না কোন পরিবার উপকৃত হতে পারে।