অন্যান্য অভ্যাসের ন্যায় ধূমপান একটি অভ্যাস। এই অভ্যাসটি যখন মানুষ আসক্ত হয়ে পরে তখন শারীরিক ও মানসিক উভয় ধরনের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করে। এ কারণে এই অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত। কিন্তু যারা ধুমপানে আসক্ত হয়েছে তারা খুব সহজে এই অভ্যাসটি ত্যাগ করতে পারে না। এর কারন হল হুটহাট করে ধূমপান ছেড়ে দিলে প্রথম প্রথম কিছু কিছু প্রক্রিয়ার সম্মুখীন হতে হয়। এই কারণে তাদের পক্ষে ধূমপান ছেড়ে দেয়া কঠিন হয়ে পরে।
আসুন জেনে নেই, ধূমপান ত্যাগ করার উপায়।
ধূমপান কেন বড় নেশা এবং কেন ছাড়বেন?
ধূমপান সহজেই ছাড়তে পারবেন যদি আপনি জানেন কখন ধূমপান নেশায় পরিনত হয়। তামাকের মধ্যে থাকা নিকোটিন নামক একটি কেমিক্যাল থাকে যা এই নেশা সৃষ্টি করে। মানবদেহেকে সতেজ রাখতে দেহের ভিতর এক ধরণের হরমোন নিঃসরণ হয়। কেউ যদি ধূমপান করে তাহলে ধীরে ধীরে এই হরমোন নিঃসরণ বন্ধ হয়ে যায়। ধূমপান করলে তামাকের এই নিকোটিন হরমোনের কাজটি করে থাকে। ফলে হুট করে ধূমপান বন্ধ করলে আপনার অস্বস্তি লাগবে, দুর্বলতা বোধ হবে। কারন দেহ থেকে সেই হরমোন ধুম্পানের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই ধূমপান বন্ধ করার কিছু দিনের মধ্যে এই হরমোন আবার আগের মত নিঃসরণ হওয়া শুরু করবে।
ধূমপান কিভাবে ছাড়বেন?
ধূমপানে আসক্ত হয়ে গেলে তা ত্যাগ করা একটু কঠিন হয়ে পরে। আসুন জেনে নেই ধূমপান ছাড়ার সহজ কিছু কৌশল।
১। হঠাৎ করে ধূমপান ছেড়ে দিবেন না, ৯০% মানুষ হঠাৎ করে ধূমপান বন্ধ করে দেয়। এভাবে মুলত খুব কম সংখ্যক লোক সফল হয়। বাকি লোকগুলো হতাশ হয়ে পুনরায় ধূমপান শুরু করে। তাই একটু সময় নিন, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিন, অন্যের সাহায্য নিন তারপর আস্তে আস্তে ত্যাগের চেষ্টা করুন।
জেনে নিন, আপনি কেন ধূমপান ছাড়বেন?
কেন আপনি ধূমপান ছেড়ে দেবেন সেটি নির্ধারণ করুন। শুধুমাত্র খারাপ অভ্যাস বলে তা ছেড়ে দেবেন এমনটা মনে করলে পুনরায় তা শুরু করার প্রবনতা থেকে যায়। প্রথমে আপনি নিজেকে শক্ত সংকল্পে আবদ্ধ করুন। মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করুন। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
২। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী তামাকের পরিবর্তে অন্য উপায়ে নিকোটিন গ্রহন করতে পারেন।
৩। নিয়মিত ব্যায়াম করার মাধ্যমে ধূমপান ছাড়তে পারেন। কারন নিয়মিত ব্যায়াম করলে ধূমপানের প্রতি চাহিদা কমে যায়।
৪। ফলমূল ও শাকসবজি বেশি বেশি করে খান। নিকোটিনের চাহিদাকে ধামাচাপা দেয়ার জন্য অন্যান্য খাবারের প্রতি মনোযোগ বাড়িয়ে দিন।
৫। নিজেকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখুন। তামাকের গন্ধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন। কেননা সিগারেটের ধোঁয়া নাকে আসলে আপনার ধূমপানের ইচ্ছা জাগতে পারে।
৬। যেসব বিষয় মাথায় রাখবেনঃ
- ধূমপানের ইচ্ছা বাড়িয়ে দেয় এমন কিছু থেকে দূরে থাকুন।
- প্রথম কয়েকদিন আপনার জন্য একটু কষ্ট হবে তাই হতাশ হওয়া যাবে না। মনকে শক্ত রাখুন।
- আমরা জানি ইচ্ছাশক্তির মাধ্যমে অনেক কিছুই করা সম্ভব তাই ধূমপানের প্রতি ইচ্ছা পোষণ করবেন না।
- ধূমপায়ীদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করুন। কারন তাদেরকে ধূমপান করতে দেখে আপনারও ইচ্ছে জাগতে পারে।
- প্রথম দিকে খুব বেশি কষ্ট হলে একটি সিগারেট খেতে পারেন কিন্তু তা যেন নিয়মিত না হয়ে যায়।
- প্রথম দিকে কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে যেমন,
– হাত পা শির শির করতে পারে,
– মাথা ব্যথা করতে পারে,
– পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে,
– ঠাণ্ডা লাগার মত অবস্থা হতে পারে,
– অতিরিক্ত রাগ হতে পারে,
– পর্যাপ্ত ঘুম না হতে পারে,
– মনোযোগের অভাব হতে পারে,
– দুশ্চিন্তা হতে পারে,
– হতাশা ও অস্বস্তি আসতে পারে,
এতে ভয় পাবেন না, কারন এসব কিছু মারাত্মক নয়, শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে এসব প্রতিক্রিয়া নির্মূল করা সম্ভব।
লেখাটি ভাল লাগলে আপনার পরিচিত বা আপন মানুষদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না কিন্তু। আপনার শেয়ারে কোন না কোন মানুষ উপকৃত হতে পারে… ধন্যবাদ…।