প্রতিটি ঘরেই তাদের সদ্যোজাত নবজাতক কত আকাঙ্ক্ষিত ধন। বাড়িতে নতুন অতিথির আগমনে সবার মনে অনেক আনন্দ বিরাজ করে। এর মধ্যে আবার শঙ্কাও বিরাজ করে। নবজাতকের সঠিক যত্ন আত্তি হচ্ছে তো? আমরা আজকে একজন শিশু বিশেশজ্ঞর সঙ্গে কথা বলে আপনাদের দিচ্ছি কিছু দিক নির্দেশনা।
জন্মের পরপর যা যা করনীয়ঃ
* সদ্যোজাত শিশুকে মায়ের দুধ খেতে দিন
* নবজাতকের গোসল করান। অবশ্যই জন্মের ৩ দিন পর
* শিশুর নাভির যত্ন নিন
* নবজাতকের চুল কাটুন
* তার চোখের যত্ন নিন , ত্বকের যত্ন নিন।
* সময়মতো সব টিকা দিন।
যে সব সমস্যা হতে পারেঃ
* শিশু জন্মের পর শ্বাস নিতে সমস্যা হওয়া
* জন্মের পর শিশুর না কাঁদা
* মাঝে মাঝে খিঁচুনি হওয়া
* শিশুর অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
* শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়া
* শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাওয়া
* শরীর হলুদ রঙ ধারন করা
*নাভিতে অনেক দুর্গন্ধ বা পুঁজ জমা হয়ে থাকা
* অনবরত বমি করা
* স্বাভাবিকের চেয়ে শিশুর নড়াচড়া কম হওয়া
* শিশু অনেক দুর্বল, যেমন কাঁদতে কষ্ট হওয়া, কিছুক্ষণ পরপর নেতিয়ে পরা
শ্বাস না নিলে আপনার করনীয়ঃ
* পরিষ্কার নরম কাপড় দিয়ে শিশুর সম্পূর্ণ শরীর খুব ভালো করে মুছুন।
* নাকে, মুখে, কানে কালচে সবুজ পায়খানা লেগে থাকলে আলতভাবে আঙুলে কাপড় পেঁচিয়ে পরিষ্কার করে ফেলুন।
* শিশুকে কাত করে ধরে পিঠের মেরুদণ্ড বরাবর নিচ থেকে ওপর দিকে বারবার হাতের তালুর নিচের অংশ দিয়ে ঘষুন।
* শিশুর শরীরের রং এবং শ্বাসপ্রশ্বাস এর দিকে লক্ষ করুন। যদি শিশুর ঠোঁট, জিহবা সহ সমগ্র মুখের রং গোলাপি হয় এবং নিয়মিত শ্বাস নেয় তাহলে শিশুকে বুকের দুধ দিন।
শ্বাস না নিলে যা কখনোই করবেন নাঃ
* পা ধরে মাথা নিচের দিকে দিয়ে উল্টো করে নবজাতককে ঝোলাবেন না
* তাকে শরীরের কোন জায়গায় আঘাত করবেন না
* শিশুর শরীরে ঠাণ্ডা পানির ছিটে দিবেন না
* কানে বা নাকে ফুঁ দিবেন না
* শিশুর বুকের খাঁচায় চাপ দিবেন না
* গর্ভফুলের জন্য অপেক্ষা করতে করতে নবজাতককে ফেলে রাখবেন না
* মধু বা চিনির পানি খাওয়াবেন না
নবজাতক শিশুর গরমে যত্নঃ
কখনো কোন অবস্থাতেই খুব বেশী পরিমাণে পাউডার বা তেল আপনার শিশুর ত্বকে ব্যবহার করবেন না, যা শিশুর কোমল ত্বকের জন্য ক্ষতিকর। প্রয়োজনের চেয়ে বেশী পাউডার ব্যবহার করার ফলে শিশুর ত্বকের লোমমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায় এবং শারীরিক প্রক্রিয়া বাধাপ্রাপ্ত হয়। এতে শিশুর ঘামাচি ও র্যাশ হতে পারে। অতিরিক্ত রোদে নবজাতক শিশুকে নিয়ে বের হবেন না কখনো। নবজাতকের সামনে হাঁচি-কাশি দিবেন না। শিশুকে ঠাণ্ডা ও আরামদায়ক পরিবেশে রাখবেন। শরীর ঘেমে গেলে বারবার শুকনো নরম কাপড় দিয়ে খুব আলতোভাবে গা মুছে দিন।শিশুকে অবশ্যই সুতি ও নরম আরামদায়ক পোশাক পড়াবেন। নবজাতক শিশুর মাকে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরলজাতীয় খাবার খেতে দিন। এতে মায়ের বুকের দুধ থেকে শিশু পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে।
নবজাতক শিশুর শীতে যত্নঃ
শিশুকে সুতি কাপড় পরিয়ে নরম কাঁথা দিয়ে মুড়িয়ে রাখুন। বেশী শীতে সোয়েটার ব্যবহার করুন। শিশুর ত্বকে বেবি অয়েল বা লোশন ব্যবহার করুন। দিনের বেলা ঘরের দরজা জানালা সব খুলে দিন যাতে করে রোদ ও নির্মল বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে।
শিশুর জামা কাপড় ঘরের মধ্যে না শুকিয়ে অবশ্যই রোদে শুকাবেন। শিশুকে রাতে শোয়ার সময় ডায়াপার পরিয়ে শোয়ান। শিশুকে কখনো আলাদা দোলনায় রাখবেন না। তাকে বাবা মায়ের সাথে নিয়ে ঘুমাবেন। এতে শিশু উষ্ণ থাকবে, বাবা মায়ের সঙ্গে আন্তরিকতা বাড়বে এবং মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে সুবিধা হবে। শিশুকে ঘরের বাইরে না নেওয়ার চেষ্টা করুন। রোদে দিতে হলে ঘরের জানালার পাশে শুইয়ে বা ঘরের বারান্দায় বিছানা পেতে রোদ লাগান। কাশি হলে, শ্বাস টানতে শব্দ করলে, দুধ টেনে খেতে না পারলে, শিশুর নিঃশ্বাসের সঙ্গে পাঁজর বেঁকে যেতে থাকলে অতিদ্রুত চিকিৎসকের পরামরশ নিন।
এমন অনেক ছোট ছোট বিষয় আছে যেগুলো খেয়াল করলে আপনি আপনার আদরের সোনামণিকে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন।