১। বর্তমানে ফেসবুক একটি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সারা পৃথিবী জুড়ে এর বিস্তার। বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। বর্তমানে তরুণ প্রজন্ম সবচেয়ে বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে। বর্তমানে অনেকেই ফেসবুক এর নিয়ম কানুন ভালভাবে জানেন না। এ জন্য অবশ্য অনেক বিরম্বনায় পড়তে হয় অনেক সময়। বিশেষ করে হয়রানির শিকার হয় মেয়েরা। যেহেতু ফেসবুক এর মাধ্যমে অপরাধীকে খুজে পেতে অনেকটা কষ্টের ব্যাপার তাই ফেসবুক এ গোপনীয়তার অনেক অপশন আছে, সেগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন ধরনের প্রাইভেসি সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হবে।
২। যেকোনো সময় আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়ে যেতে পারে, এ জন্য আপনি আপনার ছবি, নোট, কিংবা জরুরী ফাইল এর ব্যকআপ রাখতে পারেন। ফেসবুক এ ব্যকআপ রাখার সুবিধা আছে। এর জন্য আপনাকে অ্যাকাউন্ট এ যেতে হবে তারপর অ্যাকাউন্ট সেটিং এ ক্লিক করতে হবে। এরপর Download a Copy এখানে ক্লিক করতে হবে। এরপর একটি নতুন পেজ আসবে সেখানে Start My Archive অপশনটি আসবে ওটাতে ক্লিক করতে হবে। এখানে ক্লিক করার সাথে সাথে আপনার আসল প্রোফাইল এর মত একটি প্রোফাইল তৈরি হওয়া শুরু করবে। এই প্রোফাইলটাকে মূলত আমারা ব্যকআপ প্রোফাইল বলতে পারি। এই প্রোফাইলটি তৈরি হয়ে গেলে আপনার এমেইল এ একটি মেইল যাবে। তখন আবার আপনাকে অ্যাকাউন্ট অপশন থেকে অ্যাকাউন্ট সেটিং এ যেতে হবে। সেখানে Download Copy অপশন এ ক্লিক করলেই আপনি আপনার প্রোফাইলটি ডাউনলোড করে নিতে পারবেন। ডাউনলোড করা ফাইলটি জিপ ফরমেটে থাকবে। এটাকে আনজিপ করে নিতে হবে। এর মাধ্যমে আপনি আপনার হারিয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্ট এর সবকিছু দেখতে পারবেন।
৩। Security Question এর মাধ্যমে আপনি আপনার ফেসবুক নিরাপদ রাখতে পারেন। এজন্য আপনাকে অ্যাকাউন্ট এ ক্লিক করে অ্যাকাউন্ট সেটিং এ যেতে হবে। ওখানে কতগুলো প্রশ্ন দেখতে পাবেন, সেখান থেকে আপনার পছিন্দমত প্রশ্ন বাছাই করে তার উত্তর সেভ করে রাখুন। যদি কখনো আপনি পাসওয়ার্ড ভুলে যান তাহলে এর মাধ্যমে আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট এ ঢুকতে পারবেন।
৪। আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট এ আপনার মোবাইল নম্বর যোগ করে রাখতে পারেন। যদি কখনো আপনার অ্যাকাউন্ট চুরি বা হ্যাক হয়ে যায় তখন আপনি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে হারিয়ে যাওয়া অ্যাকাউন্টটি উদ্ধার করতে পারবেন। এ জন্য আপনাকে অ্যাকাউন্ট থেকে অ্যাকাউন্ট সেটিং এ ক্লিক করতে হবে, এর পর মোবাইল এ ক্লিক করুন। এরপর আপনি আপনার নম্বরটি যোগ করে দিন। যদি আপনার নম্বরটি যোগ না হয় তবে Add this phone number to my profile এর টিক চিহ্নটি তুলে দিন। আপনি আপনার মোবাইল থেকে F লিখে 32665 এই নম্বরে মেসেজ পাঠিয়ে দিন। কিছুক্ষন পরেই আপনার মোবাইল এ একটি ফিরতি মেসেজ আসবে সেখানে একটি কোড থাকবে সেটি আপনাকে বক্স এ লিখতে হবে এবং next ক্লিক করতে হবে।
৫। সবাই যদি আপনার অ্যাকাউন্ট এর পাসওয়ার্ড জেনেও যায় তাহলেও তারা কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট এ ঢুকতে পারবে না। এজন্য আপনাকে যা করতে হবে তা হল- প্রথমে লগইন করতে হবে, অ্যাকাউন্ট অপশন থেকে অ্যাকাউন্ট সেটিং অপশন এ ক্লিক করতে হবে। এরপর সিকিউরিটি অপশন এ যেতে হবে এবং ক্লিক করতে হবে। তারপর নতুন একটি পেজ খুলে যাবে। তখন সেখানে লগইন নোটিফিকেশান অপশন এর দান পাশে এডিট বাটনে ক্লিক করতে হবে। তারপর ইমেইল এর পাশের বক্সের টিক চিহ্নটি তুলে দিয়ে changes এ ক্লিক করতে হবে। এখন লগইন আপ্রভাল এর ডান পাশে এডিট এ ক্লিক করলে Require me to enter a security code sent to my phone এর টিক চিহ্নটি তুলে দিতে হবে। এরপর Set up now তে ক্লিক করতে হবে। এরপর ফোন নাম্বার বক্স এ আপনার নম্বরটি দিতে হবে, তারপর Continue তে ক্লিক করতে হবে। এই সময় আপনার মোবাইল এ একটি কোড চলে আসবে সেই কোডটি কোড বক্সে লিখে দিয়ে continue তে ক্লিক করতে হবে। তারপর save change অপশন টিতে ক্লিক করতে হবে। তারপর আপনার অ্যাকাউন্ট টি লগআউট করে আবার লগইন করুন। দেখবেন নতুন একটি পেজ খুলে গেছে। এখানে আপনাকে Add to your list of recognized devices বক্সের টিক চিহ্নটি তুলে দিয়ে continue তে ক্লিক করতে হবে। এটি করলে কেউ অন্য কম্পিউটার থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট এ ঢুকতে পারবে না। কেউ যদি প্রবেশের চেষ্টা করে তাহলে আপনার মোবাইল এ একটি কোড চলে আসবে। এই কোড ছাড়া কেউ আপনার অ্যাকাউন্ট এ ঢুকতে পারবে না। এর পাশাপাশি আপনার ইমেইল এ একটি মেইল যাবে, সেখানে থাকবে কে, কখন, কোন নামে, কোন আইপি থেকে আপনার অ্যাকাউন্ট এ ঢুকার চেষ্টা করা হয়েছিল।
৬। অনেক সময় অপ্রয়োজনীয় কিছু বিষয় চলে আসে যেমন- see who have visited your profile। এই ধরনের কোনকিছুতে আপনি ক্লিক করবেন না। এতে ক্লিক করলে আপনার প্রোফাইল এ আপনাআপনি তাদের কিছু মেসেজ যুক্ত হয়ে যাবে। এগুলকে সবসময় এড়িয়ে চলুন।
৭। আপনি আপনার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে কাউকে হুমকি দেবেন না, কেননা যদি কেউ আপনার আইডির নামে রিপোর্ট করে তো আপনার আইডি আর নাও ফিরে পেতে পারেন।
৮। আপনার অ্যাকাউন্ট এর নিরাপত্তার জন্য অনেক শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে পারেন। small letter ও Capital letter মিলে আপনি আপনার পাসওয়ার্ড তৈরি করতে পারেন, আবার এর সাথে কয়েকটি নম্বর ও যোগ করে দিতে পারেন। সবচেয়ে ভাল হয় যদি !@#৳% এই গুলো পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনি অন্তত ১০-১৫ অক্ষরের মধ্যে পাসওয়ার্ড দিতে পারেন।
৯। আপনি নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে যদি আপনার পাসওয়ার্ড ফাসও হয়ে যায় তবুও কোন ভয় থাকবে না। কখনো পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে forget password অপশন টি তো আছেই আপনার জন্য।
১০। অপরিচিত ব্যক্তিকে বন্ধু না বানানই উচিৎ। তাই কাউকে বন্ধু বানাতে চাইলে তার প্রোফাইল এর ছবি ও প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই করে বন্ধু বানাবেন।
১১। ফেসবুক এ অনেক ধরনের লিংক চলে আসে। তাই হুট হাট করে ঐ লিংকগুলোতে ক্লিক করবেন না। এতে আপনার অ্যাকাউন্ট এর অনেক বড় ক্ষতি হতে পারে।
১২। বর্তমানে সবচেয়ে বেশি হ্যাক হচ্ছে ইমেইল এর মাধ্যমে, সুতরাং যদি মেইল এর মাধ্যমে যদি ব্যাক্তিগত তথ্য চাওয়া হয় তবে আপনি তা কখনই করবেন না। ফেসবুক মেইল দিয়েও হ্যাক করা যায় তাই আপনার মেইল এর পাসওয়ার্ড টিকেও শক্তিশালী করতে হবে।
১৩। আপনি আপানার ফ্রেন্ডদেরকে কয়েকটি গ্রুপ করে রাখতে পারেন। ক্লাসমেট, পরিবার, কলেজ ইত্যাদি গ্রুপ করতে পারেন, এতে করে সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে।
১৪। ফেসবুকে সার্চ অপশন গিয়ে সার্চ করলে অনেককেই খুজে পাওয়া যায়। আপনি চাইলে এটি বন্ধ করে দিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে সেটিং এ যেতে হবে তারপর প্রাইভেসি তে যেতে হবে ওখানে আপনি যেটা সিলেক্ট করবেন সেটা কার্যকরী হবে। আপনি চাইলে গুগল সার্চ লিস্ট ও বন্ধ করে দিতে পারেন। এর জন্য আপনাকে search privacy setting তে গিয়ে Public search result থেকে টিক চিহ্নটি মুছে দিতে হবে।
১৫। অনেকেই অনেককে ট্যাগ করে থাকেন। আপনি চাইলে এটিও বন্ধ করে দিতে পারেন তাহলে আপনাকে কেউ ট্যাগ করতে পারবে না। এটা করতে হলে আপনাকে privacy settings এ যেতে হবে তারপর photos tagged of you তে গিয়ে only me অপশন টি সিলেক্ট করে দিতে হবে।
১৬। আপনি আপনার অ্যাকাউন্ট এর ছবির অ্যালবাম গুলোর নিরাপত্তা বাড়াতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি যখন এটি আপলোড করবেন তখন একটি অপশন আসবে যে এটি কে কে দেখতে পাবে, তখন আপনাকে সিলেক্ট করে দিতে হবে।
১৭। আপনি আপনার news feed নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। অনেক সময় অনেকেই কিছু কিছু বিষয় কারো কাছে শেয়ার করতে চায়নি অথচ নিউজ ফিড এ চলে এসেছে। এর জন্য facebook application অপশন এ গিয়ে আপনার ইচ্ছে মত পরিবর্তন করতে পারবেন।
১৮। আপনার contact information প্রাইভেট করতে পারেন। যেমন আপনার ফোন নম্বর, ইমেইল নম্বর, আপনার ঠিকানা ইত্যাদি হাইড করে রাখতে পারেন। Privacy setting এ গিয়ে contact information থেকে আপনি এই কাজটি করতে পারেন।
১৯। আপনি চাইলে ওয়ালপোস্ট নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। এ জন্য আপনাকে privacy setting থেকে information অপশনটি বাছাই করতে হবে। সেখানে friends to friends on my wall অপশন এ টিক দিতে হবে।
২০। আপনি চাইলে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিকে ব্লক করে দিতে পারেন। আপনি যদি কোন ব্যক্তির সাথে কোন প্রকার যোগাযোগ না করতে চান তাহলে ব্লক করে দিতে পারেন। সেখানে ঐ ব্যক্তির নাম অথবা ইমেইল দিয়ে ব্লক করে দেয়া যাবে।
২১। মনে রাখবেন পর্ণগ্রাফির কারণে আপনার অ্যাকাউন্ট ব্যান্ড হয়ে যেতে পারে। এ ধরণের অবৈধ কাজ করলে কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই আপনাকে ব্যান্ড করে দেবে ফেসবুক।
২২। আপনি যখন কোন স্ট্যাটাস দিবেন অথবা মেসেজ আদান প্রদান করবেন তখন অবশ্যই ভাষার দিকে একটু বেশি নজর দিবেন। কারন কেউ যদি আপনার নামে রিপোর্ট করে তো আপনার খবর আছে। আপনার অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
২৩। ভুয়া প্রোফাইল যারা ব্যবহার করে তাদের অ্যাকাউন্ট অনেক তারাতারি বন্ধ হয়ে যায়। যদি কেউ আপনার নামে অভিযোগ করে।
২৪। প্রতিদিন ২০ টির বেশি ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠানো যাবে না। যদি আপনি বেশি করে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট পাঠান তাহলে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
২৫। অনেকেই অনেকগুলো গ্রুপে জয়েন্ট করে থাকেন। এটি করা মোটেও উচিৎ নয়। ফেসবুক তখন আপনাকে ভাল চোখে দেখবে না। এতে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে।
২৬। আপনি যদি অতিরিক্ত মেসেজ আপনার বন্ধুদের দেন বা মেসেজ পোস্ট করেন বা ট্যাগ করেন তবে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিতে পারে। একই মেসেজ যদি আপনি বার বার দিতে চান তাহলে আপনাকে মেসেজ এর মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। সেটা না করলে আপনার এটাকে স্পাম হিসেবে ধরে নিতে পারে।
এ বিষয়গুলোর প্রতি লক্ষ্য রেখে ফেসবুক ব্যবহার করলে আপনার প্রিয় অ্যাকাউন্টটি বন্ধ হওয়ার সম্ভবনা থাকবে না। আপনি অনেক আনন্দের সাথে কোন ভয় ছাড়াই ব্যবহার করতে পারবেন ফেসবুক। সবসময় মনে রাখা দরকার www.facebook.com ছাড়া অন্য যেকোনো একই ধরনের লিংক ফেক, যেমন হতে পারে www.faceb00k.com দেখতে একই রকম মনে হয়, এখানে আপনার অনেক বড় বিপদ হতে পারে। এই ধরনের লিংক এ আপনি কখনই ক্লিক করবেন না। কারন এই ধরনের লিংক ভুয়া। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্যই এগুলো তৈরি করা হয়েছে।
ধন্যবাদ সবাইকে